সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৬ আলীম পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার ও ৬ শিক্ষককে শোকজ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরীন আক্তার। শনিবার দুপরে বালাগাত মান্তিক (যুক্তি বিদ্যা) পরীক্ষা চলাকালে এ আদেশ দেন। এসময় সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার নবনির্বাচিত এডহক কমিটির আহবায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চোধুরী উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্র সচিব নূরুল আফছার ফারুকী জানান, ওই দিন বালাগাত মান্তিক (যুক্তি বিদ্যা) পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে দায়ে সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা চার জন ও বখতারমুন্সি ফাজিল মদরাসার দুই জন শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী মোকাদ্দাস হোসেন, হাবিবুর রহমান, আবদুল মোতালেব, তাজুল ইসলা, নুর নাহার ও তাসলিমা আক্তারকে বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রে দায়িত্বরত ৬ শিক্ষককে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষায় অসদোপায়ের ‘আতুড় ঘরে’ পরিণত হয়। এ মাদরাসার অধ্যক্ষ আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার প্রধান আসামী সিরাজ উদ দৌলা অনিয়মের ‘আখড়ায়’ পরিণত করেন। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসাধু শিক্ষকদের সাথে আতাত করে কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের অনিয়েমের সুযোগ করে দিতেন তিনি। ফলে এ মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রেও প্রভাব বিস্তার করে অনিয়ম ভোগ করতো। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে বই নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ ও প্রকাশ্যে নকলের সুবিধা আদায় করে নিতো। কোন শিক্ষক সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করলে তাকে নানা ভাবে হেনস্থা করার হতো।
শনিবার ওই মাদরাসা কেন্দ্রে ৬ শিক্ষার্থীকে বহিস্কার ও ৪ শিক্ষককে শোকজ করার পর ফের আলোচনায় আসে মাদরাসাটি। নুসরাত হত্যাকান্ডর পর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অনিয়ম-দূর্নীতি ও অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার দৌরাত্ম সম্পর্কে জানা যায়।
মাদরাসা কমিটিকে নিজ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পছন্দের লোকদের বসাতেন সিরাজ উদ দৌলা। দুই দশক আগে জাল-জালিয়তির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সিরাজ উদ দৌলা যে দল ক্ষমতায় থাকেন সে দলে প্রভাবশালীদের নিয়ে মাদরাসায় আধিপত্য বিস্তার করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মাদরাসা কেন্দ্রে শোকজ পাওয়া এক শিক্ষক জানান, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসায় পরীক্ষার সময় দায়িত্ব পালন করে আসছি। বিগত বছরগুলোতে পরীক্ষার হলে অনেকটা অসহায়ের মতো দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অসদোপায়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চাইলে সিরাজ উদ দৌলার রোষানলে পড়তে হয়। কয়েকজন ছাত্রকে লেলিয়ে দিয়ে পরদিন আমার অধ্যক্ষকে ডেকে ভৎসনা করেন সিরাজ উদ দৌলা। পরে নিরাপত্তার সার্থে আমাকে বেশ কয়েকদিন পরীক্ষায় দায়িত্ব নিতে দেননি আমাদের অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজন চৌধুরী জানান, পরীক্ষার হলে নকলে ছড়াছড়ি দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। পরবর্তীতে অসদোপায় অবলম্বনের দায়ে ৬শিক্ষার্থীকে বহিস্কার ও ৬ শিক্ষককে সৌকজ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এ কেন্দ্রটি নকলের ‘আতুড় ঘরে’ পরিণত হয়েছিলো বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগিরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনা তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামালা দায়ের করেন। মামলার এজহারভূক্ত ৮ আসামীসহ এখন পর্যন্ত ২১জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি