জিয়াউল হক (৫০)। ১ বছর ধরে তার বাম স্তনে একটা টিউমার দেখা দেয়। এটাতে কোন ব্যথাবেদনা নাই, খুব ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, তাই তিনি এটার চিকিৎসা বিষয়ে তেমন মাথা ঘামাননি। গত ২ সপ্তাহ ধরে টিউমারে হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়া ব্যথা দেখা দেয়। এতে তিনি চিকিৎসার ব্যাপারে নড়েচড়ে বসেন। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। চিকিৎসক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন প্রকার এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিয়ে সাধ্যমতো চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোনভাবেই রোগীর টিউমারের ব্যথা কমছে না, দিন দিন দ্রুতগতিতে এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসক তাকে পরামর্শ দিলেন এখন অবস্থাদৃষ্টে অপারেশন প্রয়োজন। এতে রোগীর চোখ ছানাবড়া। রোগী কোনভাবেই অপারেশন করবেন না। অপারেশন করাতে তার প্রচন্ড ভয়। তার এক ছোটভাই এর পরামর্শে আমাদের নিকট আসেন। আমরা যেন ঔষধের মাধ্যমে তার স্তন টিউমারে চিকিৎসার চেষ্টা করি। রোগীরা সবকিছু সহজভাবে ভাবলেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে অতি সহজে রোগ আরোগ্যকারী সঠিক ঔষধটি নির্বাচিত করতে পারিনা। এটা আরো জটিল হয় যখন কোন চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়, তখন আমরা রোগের ভালমন্দ, চিকিৎসায় বাধা, জটিলতা অনেক কিছুই মাথায় রেখে আগাতে হয়। তাই আমরাও রোগীকে তার টিউমার অপারেশন করার বিষয়ে বুঝাতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু রোগীর মনে ভয় বেশি। সে কোনভাবেই অপারেশন করাবেন না। তার মনে অগাধ বিশ্বাস, আল্লাহর রহমতে সে হোমিওপ্যথিক চিকিৎসায় আরোগ্য হবে। বার বার অনুরোধ করছে আমরা যেন তাকে ফিরিয়ে না দিই। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার রোগীলিপি অর্থাৎ রোগের পূর্ণ বিবরণী নিতে রাজী হলাম। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে একই প্রকার রোগে সকল রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত একই ঔষধ হয়। হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে সেভাবে কখনো চিকিৎসা হয়না। রোগ একই হলেও রোগীর আঙ্গিক লক্ষণ, সার্বদৈহিক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, হ্রাস-বৃদ্ধি প্রভৃতি বিচারে ঔষধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ রোগীর রোগ লক্ষণের সাথে হোমিওপ্যথিক পরীক্ষিত যে ঔষধটির লক্ষণের সাথে বেশি মিল পাওয়া যাবে, সেই ঔষধে বিনা কষ্টে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে, তুলনামূলক অল্প সময়ে রোগী আরোগ্য হবে। এটাই হোমিওপ্যথিক চিকিৎসার বিশেষত্ব।
আমরা রোগীলিপি নিয়ে জিয়াউল হক এর স্তন টিউমারের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষণাবলী পেলাম তা হলঃ তার বাম স্তনের স্থান খুব বেশি লাল হয়ে আছে, স্পর্শ করে দেখলাম প্রচন্ড তাপ আছে, রোগীর ঐ স্থানে অনুভূতির কথা জিজ্ঞেস করলাম রোগী বললেন অনেক ব্যথা সহ্য করা যাচ্ছে না, স্পর্শে ব্যথা বাড়ে, ব্যথা স্থায়ী নয় আসা-যাওয়া করে। ব্যথার স্থানে জ্বালাও আছে, দপদপ করা ব্যথা। রোগের অতীত ইতিহাসে পেলাম অনেক দিন ধরে বাম স্তনে টিউমার, ব্যথা ছিলনা, গত ২ সপ্তাহ ধরে ব্যথা, তাপ ও টিউমার বৃদ্ধি দেখা দেয়। অন্য চিকিৎসায় উপকার পাচ্ছেন না। রোগী ঠান্ডা সহ্য করতে পারেন না। মাথার তালু গরম থাকে হাত পা ঠান্ডা থাকে। রোগী সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়ে যায়। সামান্যতে ঠান্ডা লাগে। রোগের বৃদ্ধি পেলাম স্পর্শে, উপশম পেলাম শুয়ে থাকলে এবং বিশ্রামে।
উক্ত রোগীর স্তন টিউমারের বর্তমান কষ্টকর লক্ষণাবলীর সাথে আমরা হোমিওপ্যাথিক যে ঔষধটির মধ্যে সর্বাদিক মিল পেলাম তা হল ” বেলেডোনা”। উক্ত ঔষধ সেবনে তার টিউমারের ব্যথা দ্রুততার সাথে কমে, তাপ ও দপদপানি কমে। টিউমারে মুখ হয়, অনেকগুলি পুঁজ যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে বিনা কষ্টে আল্লাহর রহমতে আরোগ্য হয়।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।