ফেনী ইউনিভার্সিটিতে ল’ সিম্পোজিয়াম • নতুন ফেনীনতুন ফেনী ফেনী ইউনিভার্সিটিতে ল’ সিম্পোজিয়াম • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফেনী ইউনিভার্সিটিতে ল’ সিম্পোজিয়াম

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:০৮ অপরাহ্ণ, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮

এমন ভাবে আরজি উপস্থাপন করতে হবে, যাতে বিচারকের চোখে পানি চলে আসে। এমনই মন্তব্য করেছেন দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া। শনিবার সকালে ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের আয়োজনে “ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ফর ল’ স্টুডেন্টস” শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে তিনি বলেন, “এমন ভাবে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন হবে, যাতে বিচারক আবেগ আপ্লুত হয়ে যান। তাই আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে তোমাদের প্রচুর সাহিত্য পড়তে হবে। ভাষার ওপর দখল থাকতে হবে।”

সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে এই জজ বলেন, “যে যে ডিসিপ্লিনে পড়ালেখা করেছে কর্মক্ষেত্রেও তার সেই বিভাগে থাকা উচিৎ। কেউ এমবিবিএস পড়ে পুলিশ বা ফরেন সার্ভিসে কাজ করছেন। আরাব কেউ দেখা যায়, রসায়নে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সরকারি আমলা হয়েছেন। এতে করে তাঁর মূলধারার পড়ালেখার সঙ্গে কাজের কোনো মিল থাকে না। তাই তোমরা যারা আইন নিয়ে পড়াশোনা করছো; আমি চাইবো অবশ্যই তোমরা আইন সম্পর্কিত পেশায় আসো।”
আইন পেশার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আইন একটি স্বাধীন পেশা।  অ্যাডভোকেটরা সাংবাদিকতাসহ অন্যান্য স্বাধীন পেশার মতোই স্বাধীনতা ভোগ করেন। কিন্তু জজরা এত স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না। তাদেরকে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে সামাজিকতা রক্ষা করতে হয়। তিনি আরো বলেন, “ আইনজীবীদের একদিনের আয় জজদের পুরো এক মাসের বেতন। তবে আইনজীবীদের অনেক পরিশ্রম করে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করতে হয়। বলা হয়ে থাকে, আইনজীবীরা জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রাস্তা তৈরি করেন, আর বিচারকরা সেই পথ দিয়ে হেঁটে যান।”

আইন পেশাকে সাহসী পেশা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মহত্মা গান্ধী, সোহরাওয়ার্দীরা আইনজীবী ছিলেন। আমাদের বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতিও একজন আইনজীবী। আইনজীবীরা হলো স্যোশাল ইঞ্জিনিয়ার । সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনজীবীদের প্রয়োজন আছে। কেউ যদি মনে করে সে বি ত হচ্ছে সে তখন আইনের দারস্থ হয়। তাই সমাজকে সুশৃঙ্খল রাখতে আইনজ্ঞদের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া রাজনীতিবিদসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যাক্তিরা আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন এবং আছেন।” বলেন তিনি।

আইনের শিক্ষার্থীদের পড়াখেলার ওপর গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “মনপ্রাণ দিয়ে পড়া লিখা করতে হবে। ভাল ডিগ্রি নিতে হবে। মেধা সার্প থাকতে হবে। আইনজীবী মানে সারাজীবনের জন্য ছাত্র। যত বেশি পড়াশুনা করতে পারবে তত বেশি এই পেশায় সফল হতে পারবে।” তিনি বলেন, “ফেনীতে একটা পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এখন এখানকার শিক্ষার্থীদের আর ঢাকা চট্টগ্রাম যেতে হবে না। ফেনীর সন্তান হিসেবে আমি এই প্রতিষ্ঠানের উত্তর উত্তর সাফল্য কামনা করি।”

আইন পেশায় চাকরির বাজারের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আদালত ছাড়াও ব্যাংক, বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে ভাল বেতনে আইনের শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। দিন দিন আইন পেশায় চাকরির পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পড়ালেখা শেষ করে সবার আগে বার কাউন্সিলরে মেম্বারশিপ নিতে হবে। যে পেশায়ই যাওনা কেন আগে তোমাদের অ্যাডভোকেট হতে হবে।
নিজের কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটা মৃত্যুদ-ের রায় দিতে আমি তিন মাস সময় নিয়েছি। এরপরও অনেক রাত ঘুমাতে পারিনি। ইউরোপে যখন কারাগার গুলো সংশোধনাগার, তখন আমাদের দেশের জেলে অপরাধীরা চোর হয়ে ঢুকে, ডাকাত হয় বের হয়। যে অপরাধ করলো সে অসুস্থ। কিন্তু তাকে আমরা চিকিৎসা না দিয়ে শাস্তি দেই। এতে করে অপরাধ প্রবণতা কমে না। তাই এই বিষয় নিয়ে আমাদের আরো ভাবা উচিৎ।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ সাইফুদ্দিন শাহ্ সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করায় দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁইয়াকে ধন্যবান জানান। এছাড়া ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ আয়াতুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক তাইবুল হক ও রেজিস্ট্রার এ. এস. এম. আবুল খায়ের, ফেনী বারের আইনজীবী মিজানুর রহমান সেলিম।
সম্পাদনাঃ আরএইচ/ এনকে

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.