পেয়ারা চাষ করেই সাবলম্বী হাজারো কৃষক • নতুন ফেনীনতুন ফেনী পেয়ারা চাষ করেই সাবলম্বী হাজারো কৃষক • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেয়ারা চাষ করেই সাবলম্বী হাজারো কৃষক

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৩:৪৩ অপরাহ্ণ, ০৭ অক্টোবর ২০১৮

প্রাকৃতিক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ি জনপদ নামে খ্যাত বাড়বকুন্ডের লাল পেয়ারার ঐতিহ্য দেশ বিদেশে বেশ পরিচিত। আর এই পেয়ারা চাষ করেই সাবলম্বী হচ্ছে বাড়বকুন্ডের হাজারো কৃষক।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাড়বকুন্ড বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে আঁকাবাঁকা পুরো পাহাড়ি এলাকায় জুড়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু পেয়ারা ও সবজির সারি সারি ক্ষেত সবুজে ভরপুর। সীতাকুন্ড উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য কৃষক পাহাড়ে লাল পেয়ারার পাশাপাশি সবজিও চাষ করেন। তবে সু-স্বাদের কারণে স্থানীয় বাড়বকুন্ড পাহাড়ের লাল পেয়ারাকে বাংলার আপেল পেয়ারাও বলে থাকেন অনেকে। অন্য সব পেয়ারার মত বাড়বকুন্ডের পেয়ারারও বাইরের রং সবুজ কিংবা হলুদ হলেও ভেতরের অংশ লাল রংয়ের হয়। তবে আঁকারে ছোট সাইজের হলেও যারা একবার বাড়বকুন্ডের লাল পেয়ারা খেয়েছেন তারা বারবার খেতে চান। এ কারণে ফল ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এই পেয়ারার চাহিদা অনেক বেশি। সকাল ৭ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত বাড়বকুন্ড বাজারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এসে এখান থেকে পেয়ারা নিয়ে যান।

সেখানে কথা হয় স্থানীয় আমিনুল ইসলামের ছেলে পেয়ারা চাষী মোঃ সাহাবুদ্দিন’র সাথে। নতুন ফেনী’র এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ১২ বছর আগে তার নিজের ১’শ’২০ শতক জায়গার উপর ১৫’শ পেয়ারার চারা লাগান আট হাজার টাকায়। গাছের পরিচর্যা ও কীটনাশক সার প্রয়োগ সহ সবকিছু মিলিয়ে তার খরচ পড়ে ১৫ হাজার টাকা। চিকন মুলি বাঁশ দিয়ে বিশেষ কায়দায় বাগান থেকে পেয়ারা পেড়ে প্রথমে ঝুড়িতে রাখেন। প্রতিটি ঝুড়িতে ১২ থেকে ১৪ কেজি পেয়ারা ভরেন। এরপর দুটি ঝুড়ি ভর্তি পেয়ারা বারে করে কাঁধে নিয়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে বাড়বকুন্ড বাজারে আড়তদারদের কাছে পাইকারি দামে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বার প্রতি ৮’শ থেকে এক হাজার টাকা করে বিক্রি করেন।

তিনি আরো বলেন, গত বছর এই বাগান থেকে দাম কম পাওয়ায় মাত্র ৬০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছি। কিন্তু এবছর ন্যায্য মূল্য পাওয়ার কারনে এ পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। গাছে এখনো যে পেয়ারা আছে তাতে আরো ৫০ হাজার টাকা বিক্রির আশা করছি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ ইব্রাহীম নতুন ফেনী’কে বলেন, বর্তমানে পাহাড়ের ৪ থেকে ৫ শতাধিক কৃষক প্রায় ৫’শ একর এলাকাজুড়ে লাল পেয়ারা ও সবজি চাষ করে সংসার চালান। প্রতি মৌসুমে বাগানের সব খরচ পুষিয়ে চাষিরা পেয়ারা বিক্রি করে প্রায় ১ থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত আয় করেন।

বাড়বকুন্ডের পেয়ারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সীতাকু-, বড়দারোগার হাট, চট্টগ্রাম, মিরসরাই, বারৈয়ার হাট, ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা, খাগড়াছড়ি, রামগড় সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যায়। এছাড়াও বাংলার আপেলখ্যাত লাল পেয়ারা দেশ ছাড়িয়ে এখন মায়ানমার এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও যাচ্ছে। অন্য পেয়ারার তুলনায় লাল পেয়ারা সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় দেশ বিদেশে এর কদর অনেক বেশি। তবে সরকারি সুুযোগ সুবিধা থাকলে এই পেয়ারার চাষ আরো প্রসার হতো বলে তিনি মনে করেন। বাড়বকু-ের ঐতিহ্যবাহী লাল পেয়ারাকে কেন্দ্র করে উপজেলার হাটবাজারে ফলের ব্যবসা এখন অনেক জমজমাট। চট্টগ্রাম শহর এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নানা কাজে সীতাকুন্ডে এই মৌসুমে আসা মানুষগুলো কিছু ক্রয় করুক আর নাই করুক পরিবারের জন্য লাল পেয়ারা নিয়েই বাড়ি যাবে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমকেএইচ

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.