মাশরাফির দিনে বাংলাদেশ হারেনা • নতুন ফেনীনতুন ফেনী মাশরাফির দিনে বাংলাদেশ হারেনা • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাশরাফির দিনে বাংলাদেশ হারেনা

নতুন ফেনীনতুন ফেনী
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:৪৯ অপরাহ্ণ, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শোয়েব মালিক আর ইমাম উল হকের জুটিটা জমে উঠেছে তখন। পাকিস্তানকে ধাক্কা দিতে হলে একটা উইকেট ভীষণ দরকার। রুবেলের ফুল লেন্থের বলে ফ্লিক করে মিড-অনে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে বলটাকে তুলে দিতে চাইলেন উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া শোয়েব মালিক। কিন্ত তিনি হয়তো ক্ষণিকের জন্যে ভুলে গিয়েছিলেন, সেখানে যে মানুষটা দাঁড়িয়ে আছেন, তার নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা!

মাশরাফি দলের সেরা ফিল্ডারদের মধ্যে কেউ নন হয়তো। বয়স হয়েছে, বারবার ছুরির নিচে কাঁটা পড়া হাটুগুলোতে টেপ লাগিয়ে অ্যাঙ্কেল গার্ড পরে প্রতিদিন মাঠে নামেন তিনি। তার ফিটনেসটাও হয়তো বাংলাদেশ দলের মধ্যে সেরা নয়। কিন্ত যে লড়াকু মনোভাবটা তিনি বুকের মধ্যে জ্বালিয়ে রেখে মাঠে নামেন, সেটা বাংলাদেশ দলের আর কারও মধ্যে নেই। একটা রান বাঁচানোর জন্যে যেভাবে তিনি ইনজুরির তোয়াক্কা না করে ঝাঁপিয়ে পড়েন, সেটা দেখে মাঝেমধ্যে ভয়ই হয়। আর এটা তো আস্ত একটা ক্যাচ, হোক না অনেকটা উঁচু, মাশরাফি কি ঝাঁপ দেবেন না?

মাশরাফি ঝাঁপ দিলেন বাঁ দিকে, যে দিকটা কিনা তার জন্যে দুর্বল। প্রত্যেক ডানহাতির জন্যেই যেদিকে ঝাঁপ দেয়াটা ঝামেলার, সেদিকেই মাশরাফি ঝাঁপিয়ে এক হাতে তালুবন্দী করলেন বলটাকে! টিভি স্ক্রীনে ভেসে উঠলো, প্রায় আড়াই ফুট লম্বা একটা লাফ দিয়েছেন মাশরাফি, সময় নিয়েছেন মাত্র ০.৮৪ সেকেন্ড! শোয়েব মালিকের চোখে তখন অবিশ্বাস, কমেন্ট্রিবক্সে ধারাভাষ্যকারেরাও হতভম্ভ হয়ে গেছেন এই ক্যাচ দেখে!

মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বল ধরা বাম হাতটা উঁচু করে ধরলেন মাশরাফি, যেন সগৌরবে ঘোষণা করে দিলেন, এই ম্যাচে বাংলাদেশকে কেউ হারাতে পারবে না! মাশরাফির দিনে কি বাংলাদেশ হারতে পারে? ক্যাচটা ধরার পরে আঙুলে ব্যাথা পেয়েছিলেন, হাত চেপে ধরে চলে যেতে হয়েছিল মাঠের বাইরে। পরে ফিরেছেন, আবারও ঝাঁপিয়েছেন ফিল্ডিং করতে গিয়ে, একটা রান বাঁচানোর জন্যেও বারবার ডাইভ দিয়েছেন সামনে পেছনে কোনকিছু না ভেবেই।

অধিনায়কের অব্যাক্ত কথাটাকে সত্যি প্রমাণ করার বাকী ভারটা কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা। মাশরাফির সেই ক্যাচটার পরে শুরু থেকে চেপে ধরা পাকিস্তানের ওপর চাপের মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। দারুণ বোলিং-ফিল্ডিং দিয়ে পাকিস্তানীদের আষ্ঠেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছিল সবাই। ইমাম-আসিফের জুটিতে ম্যাচটা যখন হাতছাড়া হবার জোগাড় হয়েছিল, তখন মিরাজ হাজির হয়েছেন সাকিবের অবতারে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের অভাবটা বুঝতেই দেননি জুনিয়র হাসান। সহজ একটা ক্যাচ দৃষ্টিকটুভাবে মিস করার পরে লিটন দাস সেটার প্রায়শ্চিত্ত করেছেন টানা দুটো দুর্দান্ত স্ট্যাম্পিং করে।

২৪০ রানের মামুলী একটা টার্গেট, অভাবনীয় কিছু না করলে এই রানে পাকিস্তানকে আটকে রাখাটা প্রায় অসম্ভব, সেই অভাবনীয় কিছুর শুরুটা হয়েছিল মিরাজের হাতেই, প্রথম ওভারেই রুবেলের দুর্দান্ত ক্যাচে ফখর জামান ফিরেছিলেন সাজঘরে। শুরুর ধাক্কার পরে একের পর এক কামানের তোপ দাগা হয়েছে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্য করে। জোড়া আঘাতে বাবর আর সরফরাজকে ফিরিয়ে টপঅর্ডার প্রায় ভেঙে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। শোয়েব মালিকের সেই ক্যাচের পরে শাদাব খানকে আউট করেছেন সৌম্য সরকার, একশোর আগেই অর্ধেক উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন পথহারা!

স্কোরবোর্ড বলবে, মাশরাফির ঝুলিতে আজ একটা উইকেটও জমা পড়েনি। ব্যাট হাতে তেরো বলে করেছেন তেরো রান, ফিল্ডিঙে দুটো ক্যাচ। অথচ স্কোরবোর্ড এটা বোঝাতে পারবে না, বাংলাদেশের এই জয়ে মুশফিকের ৯৯ রানের ইনিংসটার যা অবদান, মুশফিক-মিথুনের ১৪৪ রানের জুটিটার যেটুকু অবদান, তারচেয়ে মাশরাফির অবদান কোন অংশেই কম নয়! ফিল্ডিঙের প্রায় পুরোটা সময় ধরে মাঠের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিলেন তিনি, ইমাম-আসিফের জুটিতে যখন সেটা হাতছাড়া হতে চলেছে, তখনও একাই উৎসাহ যুগিয়ে গিয়েছেন সবাইকে। এই নাহলে অধিনায়ক! ফাইনাল নিশ্চিত করা ৩৭ রানের এই জয়টার পেছনে বড় অবদান তো মাশরাফি বিন মুর্তজার, হার না মানা মনের জোরে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন যিনি!

তাস শাফলের মতো করে বোলার পরিবর্তন করেছেন আজ, সাকিব ছিলেন না, মাশরাফিকে তার ভাণ্ডারের সবচেয়ে দামী অস্ত্রটা ছাড়াই নামতে হয়েছে মাঠে। কিন্ত সেটার ছাপ তিনি পড়তে দেননি দারুণ অধিনায়কত্ব দিয়ে। মাহমুদউল্লাহ আর সৌম্য সরকারকে বোলিঙে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন, মাঝের ওভারগুলোতে অনিয়মিত বোলার এনেই রানের চাকায় লাগাম দিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ কত বছর পরে ওয়ানডেতে পুরো দশ ওভার বোলিং করলেন, সেটা হতো তার নিজেরও মনে নেই! সৌম্য তো শিকার করেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে উইকেটও! সবটাই মাশরাফির কৌশলী মস্তিস্কের খেল। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, যেখানে বল, সেখানেই বুঝি মাশরাফি! আঙুলের ব্যাথায় দু’বার মাঠের বাইরে গিয়েছেন, আঙুলে ব্যান্ডেজ করে ফিরেছেন আবার। মাশরাফিময় এমন দিনে বাংলাদেশ কি হারতে পারে?

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.