প্রফেসর তায়বুল হক: ব্যক্তিত্ব, বাগ্মিতা ও ন্যায়নিষ্ঠতায় • নতুন ফেনীনতুন ফেনী প্রফেসর তায়বুল হক: ব্যক্তিত্ব, বাগ্মিতা ও ন্যায়নিষ্ঠতায় • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রফেসর তায়বুল হক: ব্যক্তিত্ব, বাগ্মিতা ও ন্যায়নিষ্ঠতায়

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০২:১৪ অপরাহ্ণ, ০৬ আগস্ট ২০১৮

ফেনী ইউনিভার্সিটিতে যেদিন তাঁকে প্রথম দেখি ততদিনে এই ক্যাম্পাসে আমার চার মাস পার হয়ে যায়। ততদিন পর্যন্ত ইউনিভার্সিটিকে দাঁড় করানো এবং ক্যাম্পাসে আমার মতো নবীন শিক্ষকদের কাজ শেখাবার একমাত্র অভিজ্ঞ পথিকৃৎ ইউনিভার্সিটির প্রথম উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ফসিউল আলম। ২০১৩ সালের কথা। অনভিজ্ঞ এক ঝাঁক নবীন শিক্ষকের মাঝে উপাচার্যের নিঃশ্বাস ফেলার আধার হিসেবে; ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের ও ফেনীর সচেতন মানুষের আস্থা হিসেবে অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের প্রতিমূর্তি হয়ে যিনি আমাদের সম্মুখে আলোকবর্তিকা হয়ে উপস্থিত হলেন তিনি আমাদের সকলের প্রিয়ভাজন ট্রেজারার প্রফেসর তায়বুল হক।

প্রফেসর তায়বুল হক, ট্রেজারার, ফেনী ইউনিভার্সিটি ও সাবেক অধ্যক্ষ, ফেনী সরকারী কলেজ তাঁর সাথে যিনিই মেশার সুযোগ পান তিনিই প্রথম যে গুণটিতে মুগ্ধ হন তা তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর ব্যক্তিত্ব আক্ষরিক অর্থেই উদাহরণযোগ্য। খোলা মন; উন্নত রসবোধ; অত্যন্ত গোছানো; মানসিকভাবে উদ্যমী; এবং আত্মবিশ্বাসী মনোভাব- তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশেষ দিক। উন্নত রসবোধের মাধ্যমে যেকোন মিলনমেলাকে করে তোলেন প্রাণবন্ত; পাশাপাশি পরিণত হন সকলের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনে আসছি। আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক যেকোন সভায় তাঁর বক্তব্য আমাদের আবেশিত রাখে। তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা সূত্র পাই রবীন্দ্রনাথের, সৈয়দ মুজতবা আলীর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিংবা হাল আমলের কোন লেখকের। অনর্গল আবৃত্তি করেন প্রাসঙ্গিক কোন কবিতা বা উদ্ধৃতি। তাঁর বাগ্মিতার দ্যুতি আমাদেরকে আলোকিত করে। তাইতো তিনিই সাবলীলভাবে বহুক্ষেত্রে হয়ে যান আমাদের ‘মূখ্য আলোচক’।

দুঃসাহসী চিত্তে একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতায় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বৃহত্তর নোয়াখালীতে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক খাজা আহমদের সান্নিধ্যে থেকে মাতৃভূমির এ সেবা করেছেন। ব্যক্তি জীবনেও ধারণ করার চেষ্টা করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। এবং মননে যা ধারণ করেন তা নির্দ্বিধায় বলে যান তাঁর ছাত্রদের-সহকর্মীদের। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ভুলুণ্ঠিত হতে দেখলে কষ্ট পান। তখন মাঝে মাঝে কলম তুলে নেন হাতে। লিখেন। এক সময় ফেনীতে বসে জাতীয় দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লিখতেন। এখনও অক্লান্তভাবে লিখে যান মুক্তিযুদ্ধের কথা। কখনো লিখেন বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নের কথা; মে দিবসের চেতনার কথা; কখনোবা লিখেন কোন অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধার গল্প; আবার লিখেন মুক্তিযুদ্ধ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে …।

একজন সংস্কৃতি অনুরাগী হিসেবে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে থাকেন পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে। তাঁর একমাত্র কন্যা সুলতানা মমতাজ সুমি জাতীয় পর্যায়ে নজরুল ও দেশাত্মবোধক সঙ্গীতে শিশু শিল্পী হিসেবে ১ম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সকল সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়, সকল কর্মকা-ের পিছনেই তিনি অন্যতম অনুপ্রেরক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের আয়োজনের কাজে যখনই আমরা কোথাও সংকটে পড়ি, তখনই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তায়বুল হক স্যার। ক্রীড়ামোদী হিসেবেও ক্রীড়াক্ষেত্রে একই রকম ভূমিকা রাখেন তিনি।

শিক্ষক হিসেবে তিনি শ্রেণীকক্ষে জনপ্রিয় ছিলেন, এ কথা আমরা তাঁর ছাত্রদের কাছে শুনি। নানান কাজে ফেনীর যে সকল লোকজন আমাদের ক্যাম্পাসে আসেন; তাঁদের বেশিরভাগই এসে যে ব্যক্তিটিকে খুঁজেন তিনি আমাদের ট্রেজারার স্যার। শ্রদ্ধায় অবনত চিত্তে স্যারকে সম্মান জানান তাঁরা। আবার ইউনিভার্সিটির নানান কাজে আমরা যখন বাইরে যাই, তখনও একই চিত্র দেখি। কারণ স্যারের ছাত্ররা ছড়িয়ে আছেন সারা দেশে; বিশেষত বৃহত্তর নোয়াখালীতে।

ন্যায়নিষ্ঠতার মূর্ত উদাহরণ তিনি। সারা জীবন ধরে সততার সাথে চাকুরি করছেন। লেজুড়বৃত্তি করেন না কখনো। সাবলীলভাবে কাজ করে যান সর্বদা। এখনো তাই করছেন। কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় দেখেছি সবসময় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই তিনি বলে যান। তাঁর এ গুণের কারণে অনেক সময় বিরাগভাজন হয়েছেন তাঁর প্রিয়ভাজনদের। অপরদিকে তাঁর কাছ থেকে শত্রুরাও পেয়েছেন ন্যায় বিচার- এমন উদাহরণও ভুরি ভুরি। পেশাজীবনে যৌক্তিক আন্দোলনে সবসময় সামনে থেকেছেন, সহকর্মীদের করেছেন সম্মান। এ ন্যায়নিষ্ঠতার জন্য তিনি পেয়েছেন ফেনীতে সর্বজন গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি। হয়েছেন শিক্ষাক্ষেত্রে ফেনীর ‘কিংবদন্তি’।

আজ ৬ আগস্ট তাঁর জন্মদিন। ফেনী সরকারী কলেজের পর ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ হতেও অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণের পর নবীন ফেনী ইউনিভার্সিটিকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ডের স্বপ্ন পূরণের নিরলস চেষ্টায় নিয়োজিত তিনি। প্রফেসর তায়বুল হকের অনবদ্য ভূমিকা বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ্কে সাহস যোগায়। আমরা নবীন শিক্ষকেরা প্রতিনিয়ত শেখার সুযোগ পাচ্ছি এ সুযোগে। সৃজনশীল-ন্যায়নিষ্ঠ প্রফেসর তায়বুল হক ‘কিংবদন্তিরূপে’ আমাদেরকে প্রাণের কাছাকাছি রেখে অনুপ্রাণিত করে যাবেন প্রতিনিয়ত- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত ছাত্র উপদেষ্টা, ফেনী ইউনিভার্সিটি।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.