ফেনী প্রেসক্লাব : প্রসঙ্গ সাংবাদিকতা ও রাজনীতি • নতুন ফেনীনতুন ফেনী ফেনী প্রেসক্লাব : প্রসঙ্গ সাংবাদিকতা ও রাজনীতি • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনী প্রেসক্লাব : প্রসঙ্গ সাংবাদিকতা ও রাজনীতি

নুর উল্লাহ কায়সারনুর উল্লাহ কায়সার
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:৫২ অপরাহ্ণ, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

রাশেদুল হাসান ।
২০০৯ সালে ফেনীর একটি বহুল প্রচারিত ও প্রকাশিত দৈনিক’র শুভ সূচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রেসক্লাবে প্রথম যাত্রা। গ্রামের মেঠো পথ মাড়িয়ে শহুরে পিচঢালা রাস্তায় উঠার চেষ্টা মাত্র। সে চেনা রাস্তায় দীর্ঘ ৬ বছর হাঁটার পরও কেউ এ প্রেসক্লাবে আমন্ত্রন জানায়নি। আমার মত অনেককে অদৃশ্য একটি গ্রুপে ফেলে দিয়ে ন্যার্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ ছিলনা মনে। হয়তো আমার মতো অনেকরই মনে সে আক্ষেপ জাগেনি।

ছোট বেলা থেকে লেখালেখিতে উৎসাহ থাকায় কখন যে সংবাদপত্রের সাথে জড়িয়ে পড়ি তা টেরই পাইনি। কোন রকমের দূর্ণাম ছাড়া সেই সংবাদপত্রে প্রায় ৫ বছর কাটিয়েছি। কাজ করার সুযোগ হয়েছে জাতীয় দৈনিকে। এরপর নিজেই একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে মনোনিবেশ করি। এ কয়েকটি বছরে সংবাদপত্র, সাংবাদিকতা ও রাজনীতি নিয়ে খানিকটা ধারণা লাভ করার চেষ্টা করেছি। তখনকার প্রেসক্লাব সদস্যদের মাঝে বিরাজমান অন্ত:কোন্দল নিজ চোখে দেখেছি। নিজেকে এ পেশার জড়িয়ে নেয়ায় ধিক্কার দিয়েছি বার বার।

তরুনদের সিনিয়ররা (অভিজ্ঞরা) আগলে রাখে, পথ বাতলে দেয়। কিন্তু এখানে তা রূপকথার গল্প। তাঁদের ব্যাক্তিগত স্বার্থের কারণে সৃষ্ট দলাদলি, অন্ত:কোন্দলের বলি হতে হয়েছে অনেক তরুনকে। পেশাটা অনেকটা গ্রুপ নির্ভর হওয়ায় ‘অমুকের লোক’ ‘তমুকের লোক’ বিভাজন তৈরী করা হয়েছে। রাস্তায় কোন সিনিয়রের সাথে কথা বলায় জবাবদিহি করতে হয়েছে অনেক তরুনকে। পরস্পরের দলাদলিতে এ পেশায় বিগত কয়েক বছরে মানসম্পন্ন ও সৃজনশীল সংবাদকর্মী তৈরী হয়নি বলে অনেকের ধারণা।

২০১০ সালে একটি গ্রুপ প্রেস ক্লাব থেকে বের হয়ে ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটি নামে অন্য একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। সাংবাদিকদের মাঝে অনৈক্য ও দলাদলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মত পাল্টাপাল্টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাঁরা। বিগত কয়েক বছর ধরে অন্যের মুখ দেখাদেখি থেকে বিরত রাখে নিজেদের। সাংবাদিকদের অধিকার ও সংকটে এক হতে পারেনি তাঁরা।

নিজস্ব দাবী-দাওয়া ও কালচার প্রকাশ করার জন্য প্রত্যেক কমিউনিটি জন্ম। এসব দাবী, দাওয়া ও কালচার একক, দলীয় ও সংগঠনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে পেশাজীবিদের বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি এমনকি সাংবাদিকদের অনেকগুলো সংগঠন কাজ করছে। ডাক্তারদের বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ারদের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন, আইনজীবিদের আইনজীবি সমিতি ও সাংবাদিকদের সংগঠন প্রেস ক্লাব। রাজনৈতি মতাদর্শ, চিন্তা চেতনায় অনৈক্য থাকায় এসব পেশাজীবি সংগঠনের লোকজন ভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। স্বাধীনতা চিকিৎসক ফোরাম (স্বাচিফ), ডক্টর্স এসোসিয়েশন নামের একাধিক সংগঠন অত্মপ্রকাশ ঘটলেও মাদার (মূল) সংঠন একটি। একইভাবে ইঞ্জিনিয়ারদেরও একাধিক সংগঠন রয়েছে। আইনজীবি সমিতির বাইরেও আইনজীবিদের একাধিক সংগঠন আমরা লক্ষ্য করি। সাংবাদিকদের রয়েছে বাংলাদেরশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। তাঁরা আবার (মাদার) মূল সংগঠন প্রেসক্লব’র সদস্য থেকে অন্য সংগঠন চালাতে পারেন। এখানে সদস্য হওয়ার পথ সব সময় খোলা। দল, মত নির্বিশেষে যে কেউ যে কোন সময় এখানে প্রবেশ করতে পারেন।

এত কথা বলার পেছনে একটা কারণ রয়েছে। সাংবাদিকতা পেশার সাথে যেহেতু যুক্ত সেহেতু সাংবাদিকদের সংগঠন নিয়েই আমার কথা। জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকার সাংবাদিকদের মিলস্থল। সে হিসেবে ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিকদের মিলনস্থল হয়ে ওঠার কথা ফেনী প্রেসক্লাব। গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে অধিক সংখ্যক পেশাদার সাংবাদিককে ‘আশ্রয়স্থল’ প্রেসক্লবের বাইরেই রাখা হয়েছে। অনুসারি না হলে ক্লাবে কটাক্ষ শুনে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়েছে অনেক তরুণ সংবাদকর্মীকে। অনেক গণমাধ্যমকর্মী সেখানে সংবাদ সংগ্রহে অনিহা প্রকাশ করতে শুনি। অথচ যেখানে সংবাদের জোনে পরিণত হয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাব।

তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে গণমাধ্যমেও এর ছোঁয়া লেগেছে। প্রায় এক যুগ ধরে সুনামের সাথে দেশে অনলাইন সংবাপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। জাতীয় সব সংগঠনে অনলাইন সংবাদপত্রের সাথে জড়িতরা সদস্য হতে পারলেও ফেনী প্রেসক্লাবে এ বিষয়টি উপেক্ষিত। জাতীয় ও আন্তর্জাতি ক্ষেত্রে অনলাইন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের গুরুত্বের সাথে দেখা হলেও এখানকার কর্তারা তাদের সাংবাদিক মনে করতেও নারাজ। সদস্যপদ দেয়াতো দূরের কথা।

ন্যার্য অধিকার থেকে বঞ্চিত সাংবাদিকদের একটি অংশ সম্প্রতি সোচ্চার হয়ে ওঠে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ওয়ান ইলাভেনের গঠনতন্ত্র বাতিল করে ফেনী প্রেসক্লাবে জেলার সকল সাংবাদিকের প্রবেশাধিকারের দাবী তুলে আসছে। ওই গঠনতন্ত্রে সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকরাই শুধুমাত্র সদস্য বিধান থাকলেও অন্যরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এ ক্ষেত্রে সাপ্তাহিকের বেলায় সম্পাদকের মনোনিত ব্যক্তি, দৈনিকে একাধিক সাংবাদিককে সদস্য এবং অনলাইন সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সদস্যভুক্তির দাবী করেন তারা। কিন্তু এসব দাবী তোয়াক্কা না করে তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনের আয়োজন করে তৎকালিন কমিটি। ওই নির্বাচনি তফসিল বর্জন করে একটি কমিটি ঘোষণা করে দাবী আদায়ে সক্রিয়রা। এ নিয়ে পাল্ট-পাল্টি উকিল নোটিশ ও থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। এক পর্যায়ে ২৫ ডিসেম্বর ক্লাব দখলকে কেন্দ্র করে দু’ পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে প্রশাসন ক্লাবটি সিলগালা করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে ফেনীর সুশীল সমাজে আলোচনার ঝড় ওঠে। মর্মাহত হই আমরা। সমাজের ‘আয়না’ খ্যাত পেশা ও প্রায় অর্ধশত বছরের ঐতিহ্য মন্ডিত এ প্রতিষ্ঠানের করুন পরিণতিতে বিস্মিত হই আমরা।

চলমান সংকট নিরসনে একাধিক বৈঠক হয় জেলা প্রশাসক মো: হুমায়ুন কবির খোন্দকারের কার্যালয়ে। এক পর্যায়ে তা সুরাহায় এগিয়ে আসেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে দুই জন করে প্রতিনিধির কাছে চাবি হস্তান্তর করেন। এসময় তিনি ফেনী প্রেসক্লাবকে কর্মরত সাংবাদিকদের মিলনকেন্দ্রে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ফেনী প্রেস ক্লাব মুখর উঠুক সকল সাংবাদিকদের কোলাহলে। এখানকার সংবাদকর্মীরা সকল দল, মতের উর্দ্ধে উঠে একে অন্যের সহযোগি হয়ে কাধে-কাধ মিলিয়ে আগামীর ফেনী গঠনে ভূমিকা পালন করবেন। থাকবে না কোন হিংসা, বিদ্বেষ ক্রোধ। এ দাবী ফেনীর সকল গণমাধ্যমকর্মীর।
লেখক: সম্পাদক, নতুন ফেনী ডটকম।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.