বিজয় হোক অর্থনীতির মুক্তির • নতুন ফেনীনতুন ফেনী বিজয় হোক অর্থনীতির মুক্তির • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজয় হোক অর্থনীতির মুক্তির

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৪:৫৭ অপরাহ্ণ, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

রাশেদুল হাসান ||
আজ বিজয় দিবস। ৪৩ বছর আগে এ দিন পাকবাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পন করে। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার আকাশ শত্রুমুক্ত হয়ে নতুন এক রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক একটি ভূখন্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। সঙ্গত কারণে এই দিনটি বাঙালি জাতির গৌরবের দিন, আনন্দের দিন, অহঙ্কারের দিন, আত্মমর্যাদার দিন। হাজার বছরের বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল বাঙালি জাতির নিজস্ব আবাসভূমি। এ দেশের বীর সন্তানেরা পাকিস্তান হানাদারবাহিনীকে পরাজিত করে বাঙালি জাতির বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে আনে। এ বিজয় বাঙালির অহঙ্কারের প্রতীক। এ বিজয় আপামর বাংলার মানুষের বিজয়।
বাঙালির সহস্র বছরের ইতিহাসে ১৬ ডিসেম্বরের সঙ্গে তুলনীয় একটি দিন নেই। কেননা, ১৯৭১ সালের আগে জাতি হিসেবে আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠার বিরল অভিজ্ঞতা বাঙালি আর আস্বাদন করেনি। কখনো স্বাধীনতার বিভ্রম দেখা দিলেও পরক্ষণেই তা মায়া-মরীচিকা বলেই প্রতিভাত হয়েছে। শাসনের দক্ষ হস্তান্তর ছাড়া সে ঘটনাগুলোর বিশেষ তাৎপর্য জাতি অনুভব করেনি। দীর্ঘ অতীতজুড়ে বিদেশি শাসকের পদানত বাঙালির কাছে তাই স্বাধীনতা শব্দের প্রধান অর্থ-পরাধীনতা থেকে মুক্তি। পরাধীনতার বিপরীত শব্দ স্বাধীনতা। আত্মশাসনের অধিকারই স্বাধীনতার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আজকের এই দিনে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিজয়ের যুদ্ধে আত্মবলিদানকারী সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর বিগত ৪৩ বছরে বাংলাদেশ লালন করেছে অমিত সম্ভাবনা, আশা ও স্বপ্ন। হাজারো পিছুটান সত্ত্বেও দেশটির অগ্রগতি ও উত্তরণ সত্যিই বিস্ময়কর। তারপরও অপ্রাপ্তির তালিকা বেশ দীর্ঘ বলা যায়। এখনো আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি পাইনি। অনেকে মনে করেন দেশ সঠিক পথে চলেনি। চললে আরও অগ্রগতি নিশ্চিত হতো। সঠিক পথ অবশ্যই তা স্বাধীনতার পথ। গুণীরা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, স্বাধীনতার চেতনা থেকে বিচ্যুত হওয়া অন্যায়। কিন্তু বারবার এ দেশে ব্যত্যয় ঘটেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি বিগত অনেক সরকারই দেশ শাসনে এসে স্বাধীনতার সুমহান পথ বিচ্যুত হয়েছে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে একাত্তরে পরাজিত পক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এ সময় জাতির স্বাধীনতা কেউ ছিনিয়ে নেয়নি একথা সত্য, কিন্তু দেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছে। স্বাধীনতা বলতে যে সার্বিক চেতনা তা থেকে জাতিকেও বিচ্যুত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত গণতন্ত্র বারবার পদদলিত হয়েছে। গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র অবলোকন করেছে দেশবাসী। মহান সংসদ হয়েছে অকার্যকর। ক্ষমতা প্রত্যাশায় বারবার কেঁপে উঠেছে রাজপথ। রাজনীতিতে জিঘাংসা ঢুকে পড়েছে। যে কারণে পাশ্চাত্যের উন্নত গণতন্ত্রের আদলে আমাদের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। যা জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জা বৈ আর কিছু নয়। আর এসব নেতিবাচক কারণে আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির হয়ে উঠেছে শাসকদের গালভরা বুলি। প্রশ্ন জাগে রক্ত দিয়ে আমরা কি এমন স্বাধীনতা প্রত্যাশী ছিলাম?
বাঙালি জাতি একাত্তর সালে শুধু সশস্ত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই নয়, যুদ্ধ করেছে পাকবাহিনীর এদেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস, রাজাকারের বিরুুদ্ধে। যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে। পাকিস্তানের অনুগত এই রাজাকার-আলবদররা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করেছে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে এসে হত্যা করেছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। অথচ দুঃখজনক বাস্তবতা যে, স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে একাত্তরের সেই পরাজিত অপশক্তি এখনো সম্পৃক্ত। সামরিক-স্বৈরশাসকদের হাত ধরে যুদ্ধাপরাধীরা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে। এরাই বর্তমানে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। এরাই বছরের পর বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মের একটি অংশকে করেছে বিভ্রান্ত।
আমরা মনে করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ছাড়া বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন কখনো সম্ভব নয়। তাই ৪৩তম বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে শাসনতন্ত্রে প্রতিফলনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সংবিধানে অটল থাকা। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে প্রিয় মাতৃভূমির কলঙ্কমোচন করা। স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশ আগামীতে অর্থনৈতিক মুক্তিসহ গণতান্ত্রিক, অগ্রসর, প্রগতিশীল ও উন্নত একটি দেশ হওয়ার সাধনায় ব্রতী হোক- এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.