আবদুল হাই শিকদার। জন্ম- কুড়িগ্রাম জেলায়। রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন দেশের অন্যতম বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছোট বেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বুনতেন তিনি। পড়াশোনা শেষে সাংবাদিক আখতারুল আলমের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন সাংবাদিকতা পেশায়। কবিতা, গল্প-সাহিত্য চর্চা শুরু শৈশব থেকেই। ১৯৮০ সালে ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রয়াত বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের প্রতিষ্ঠিত স্বচিত্র স্বদেশ পত্রিকার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। সেই থেকে পথ চলা শুরু। বর্তমানে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন দীর্ঘদিন। পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষ্যে ফেনী সফরে আসলে খোলামেলা কথা বলেন নতুন ফেনী ডট কমের সাথে। দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসা দেশের রাজনীতি, সাংবাদিকতা, সাম্প্রতিকসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারী
নতুন ফেনী : বিএনপি বা ২০ দলের আন্দোলন বারবার হোঁচট খাচ্ছে। জোট প্রধান খালেদা জিয়ার ডাকেও নেতাকর্মীরা সাড়া দিচ্ছে না। এতে তাদের আন্দোলন সফলতা পাবে বলে মনে করেন ?
আবদুল হাই শিকদার : আন্দোলনে সফলতা নেই এটা কেমন কথা। সব আন্দোলনেই সফলতা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দেখেন ২০১৩ সালের মার্চ ফর ডেমোক্রোসি। এটি পরিপূর্ণ ব্যর্থ হয়নি। এ কর্মসূচীতে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো ঢালাও সমর্থন করেছে। দেশের জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করতে পেরেছে। সরকার বারবার চেষ্টা করেও জোট ভাঙতে পারেনি। ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৬৯’র গণঅর্ভূত্থানেও সফলতা হাতের মুঠোয় আসেনি। ৪ বছর অপেক্ষার পর ভাষার স্বাধীনতা পাওয়া গেছে। অপেক্ষা করতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। বিজয় অবশ্যই আসবে।
নতুন ফেনী : বিএনপি ঈদ পরবর্তী আন্দোলন ঘোষনার পর হঠাৎ মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবী তুলেছে। এ দাবীকে কিভাবে দেখছেন ?
আবদুল হাই শিকদার : দাবীটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। বর্তমান সরকার ফ্যাসিষ্ট কায়দায় জবরদখল করে ক্ষমতায় বসে আছে। এভাবে গণতান্ত্রিক জীবন চলতে পারেনা। গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে। সংবিধান অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। গণতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এটি সময়ের দাবী।
নতুন ফেনী : দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক অকুতোভয় সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে বিনাবিচারে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে। তার মুক্তিতে আপনাদের ভূমিকা কি ?
আবদুল হাই শিকদার : গণতন্ত্র ও আওয়ামীলীগ প্রতিপক্ষ। আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা। ফ্যাসিবাদী আচরণ আওয়ামীলীগের আদর্শ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার শুধু মাহমুদুর রহমানকে আটকে রেখেই নয় সারাদেশে ২৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। অন্তত ২ হাজার সাংবাদিককে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
নতুন ফেনী : সাংবাদিক দম্পতি সাগর/রুনী হত্যার মূল রহস্য এখনো বের হয়নি। কিন্তু সাংবাদিকরাও বিভাজন। সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীন হলে রাষ্ট্রও ঝুঁকিতে পড়বে। এতে আপনাদের করনীয় কি ?
আবদুল হাই শিকদার : এ হত্যাকান্ড নিয়ে ডিআইজি থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত সবাই মিথ্যাচার করছে। একেকজন একেক কথা বলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছে ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার, আর প্রধানমন্ত্রী বলছেন কারও বেডরুম পাহারা দেবার দায়িত্ব নেয় নাই। তাহলে হত্যাকারীদের ধরতেও তাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী গত ক’দিন আগে বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘেও মিথ্যাচার করছে। আর সাগর-রুনীর হত্যাকারী কে সবাই জানে। এ ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ভয়ংকর প্রতারণা করেছে। বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী পন্থি সাংবাদিকরা এক মঞ্চে এসে আন্দোলন যখন তুঙে, তখন ইকবাল সোবহান সরকার থেকে সুবিধা নিয়ে মীর জাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সাগর-রুনীর রক্তের সাথে বেঈমানী করে তিনি একটি চ্যানেল ও দ্যা ডেইলী অবজারভার নিয়েছেন। অবশেষে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা পদও ভাগিয়ে নিয়েছেন।
নতুন ফেনী : ফেনীকে আপনার কেমন মনে হয়েছে?
আবদুল হাই শিকদার : ফেনী একটি নির্মল এলাকা। এ মাটিতে জন্ম নিয়েছেন ভাটির ভাগ শমসের গাজী, ভাষা শহীদ আবদুস সালাম, শহীদুল¬াহ কায়সার, জহির রায়হানের মতো দেশের কৃতি সন্তানরা। এখানে জন্ম নিয়েছেন সাংবাদিকতার কিংবন্তী এবিএম মূসা, গিয়াস কামাল চৌধুরীসহ বরেণ্য ব্যাক্তিবর্গ। উনারা তিনি এ মাটিরই সন্তান এবং বড় মনের মানুষ। তাদের সবসময়ই স্মরণ রাখতে হবে। তাদের কর্মময় জীবন সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। এসব কৃর্তিমান মানুষদের চির জাগরুক রাখতে মৃত্যুবার্ষিকী-জন্মবার্ষিকীতে আলোচনা, দোয়া ও মিলাদসহ নানা কর্মসূচী রাখতে হবে।
নতুন ফেনী : এর আগে কখনো কি এখানে আসা হয়েছে?
আবদুল হাই শিকদার : দ্বিতীয় বারের মত আমার ফেনীতে আসা। ৯০ এর দশকে মিজান রোডের শহীদ জহির রায়হান মিলনায়তনে প্রোগ্রামে যোগ দিতে আমি, আল মাহমুদ সহ আরও কয়েকজন ঢাকা থেকে এসেছিলাম।
নতুন ফেনী : আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুল হাই শিকদার : তোমাদেরও অসংখ্য ধন্যবাদ।